রাজশাহীতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত নামে বেনামে গড়ে তোলা হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকে এদের কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। তারা আবার নতুন করে চিকিৎসা কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়াই খুলে ব্যবসা করছে। নতুন এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এরা সিভিল সার্জন অফিসের কোনো নিয়মেরই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এতে করে অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে সিভিল সার্জন অফিস ও রাজশাহী ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশন মালিক সমিতি।
জানা গেছে, সম্প্রতি লক্ষীপুর মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
এরা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে প্রতারণা করে রোগী হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। প্রত্যেক রোগীপ্রতি দেওয়া হয় তাদেরকে ৫০০ টাকা। আরও লোক আছে যাদেরকে সে সপ্তাহে ৫০০ টাকা দিয়ে থাকেন বলেন এক ওষুধ ব্যবসায়ী।
তাদের লোক লক্ষীপুরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ডাক্তারের খোঁজ করলে তারা বলে অমুক ডাক্তার মারা গেছে অমুক ডাক্তার ঢাকা গেছে অমুক ডাক্তার ওখানে বসে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো।
আবার নিজেরাই ডাক্তার সেজে অভিনব কায়দায় কথা বলে রুগীর সাথে কথা শেষ হলে আবার পরে তারা সে ফোন নাম্বারটা বন্ধ করে রাখে।
আর এদের পরিচলানা করে মুন্না নামে এক সভাপতি।
বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ থেকে আশা রুগীর স্বজনদের বেলাল হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবো তাই এক মাধ্যম দিয়ে এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যায়।
ডাক্তার তিনি নিজেকে মাদকাসক্ত বলে পরিচয় দেয়।
আমি নিজে গাঞ্জা খায় গাঞ্জা খেলে কিছু হয় না এমন বক্তব্য দেন রোগীকে।
আবার নাম নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,আমার কাছে ১২০০ টাকার টেস্ট রিপোর্ট করাতে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার বিরুদ্ধে।
এ প্রতিষ্ঠানের মালিক ডক্টর জাহিদ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
উল্লেখ,এ প্রতিষ্ঠানের মালিক ডেন্টাল ডা. মোঃজাহিদ হোসেন ও শরিফ হোসেন নামের দুইজন ব্যক্তি।তিনি ডেন্টাল পাস করে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কাজ করতেন হঠাৎ তিনি অপর একজনকে সাথে নিয়ে এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও তিনি আবেদন করেছেন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নামে। ইতিমধ্যে সেখানে চলছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রোগির চিকিৎসা সেবার কাজ। সাইনবোর্ডে লাগানো হয়েছে বড়বড় পরিচিত ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের নাম। সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা চিকিৎসকদের বেশিরভাগই সেখানে বসেন না। এছাড়া এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার বিষয়ে জানে না সিভিল সার্জন অফিস।
এদিকে সম্প্রতি কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে মেডিকেল কলেজের সামনে সাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয় সিভিল সার্জন অফিস । কিন্তু সিভিল সার্জনকে না জানিয়েই সাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সিলগালা খুলে ফেলে ব্যবসা শুরু করেছেন। এমন আরো কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে যেগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন দেদারসে অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে। এছাড়াও সিভিল সার্জন অফিসে আবেদন করার আগেই গড়ে তোলা হচ্ছে নামে বেনামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই।
রাজশাহী ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশন মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নান জানান, কখন কিভাবে কে সেবার নামে চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে বসছে বুঝতেই পারছি না। অনুমতিতো দুরের কথা, জানানোই হচ্ছে না সমিতিকে। তিনি বলেন, এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলেও সমিতিকে জানানো হয়নি। তিনি রাতারাতি গড়ে উঠা এসব ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরো বলেন, এসোসিয়েশনের পক্ষে এসব ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নেই। তাই বিষয়গুলো সিভিল সার্জন দেখে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষ প্রতারিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডা. জাহিদ এর সাথে কথা বলে জানা যায় আমরা স্থানীয় বেকার যুবকদের নিয়ে কাজ করছি।তার মোবাইল নম্বরে কথা বলা হলে তিনি চায়ের দাওয়াত দেন। তবে অপর শেয়ারদার শরিফ বলেন, আমরা ভাইব্রাদার নিয়ে কাজ করছি বিষয়টি চেপে যান। আমরা আবেদন করে রেখেছি।
এদিকে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাজি মিজানুর রহমান এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বলেন আমাদেরকে কেউ লিখিত অভিযোগ দেইনি। আপনি যে অভিযোগগুলোর কথা বললেন আমি বিষয়টি তদন্ত করে এসিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এছাড়াও যারা সিলগালা করে দেয়ার পরও আইন অমান্য করে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডেস্ক / একটিভ নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :