সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড়, চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে দিনদিন বেড়েই চলেছে চোরাচালান।
সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেড তৈরি করে তাদের গডফাদারদের বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন ভারত থেকে ওপেন কয়লা, পাথর, কাঠ, গাছ, চিনি, চাল, বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, অস্ত্র ও গরু পাচাঁর করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, জঙ্গলবাড়ি ও এলসি পয়েন্ট এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে চোরাকারবারী রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, লেংড়া জামাল, খোকন মিয়া, মানিক মিয়া, শহিদুল্লা, বাবুল মিয়া, একদিল মিয়া,
কুদ্দুস মিয়া, আনোয়ার মিয়াগং ভারত থেকে কয়লা, কাঠ, মদ ও চাল পাচাঁর করে নৌকা বোঝাই করে নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার মনতলা এলাকার আজিজ মিয়া ও সাজু মিয়ার ডিপুতে নিয়ে যায়।
কিন্তু, এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে গতকাল সোমবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, গারোছড়া, রাজাই ও কড়ইগড়া এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী রফিকুল ইসলাম, জম্মত আলী, আলমগীর ও আবু বক্করগং ভারত থেকে কয়লা, মদ ও গরু পাচাঁর শুরু করলে, খবর পেয়ে পাশর্^বর্তী লাউড়গড় ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা বারেকটিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬টি গরু আটক করে।
অন্যদিকে, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে চিহ্নিত চোরাকারবারী আবুল কালাম ও লিটন মিয়াগং বস্তা ভর্তি করে কয়লা ও মদ পাঁচার করে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখে। এ খবর পেয়ে টেকেরঘাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা লাকমা গ্রামের চোরাকারবারী লিটন মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের ৬৯ বোতল মদসহ ৩শ কেজি চোরাই কয়লা উদ্ধার করে।
কিন্তু, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি তারা পালিয়ে যায়। এঘটনার প্রেক্ষিতে টেকেরঘাট কোম্পানীর বিজিবি হাবিলদার ওলী উল্লাহ বাদী হয়ে, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লালঘাট গ্রামের চিহ্নিত চোরাকারবারী ইয়াবা ও মদ ব্যবসায়ী আবুল কালাম, তার সহযোগী একই ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী লিটন মিয়া ও পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়গড় গ্রামের শাজাহান কবিরকে আসামী করে থানায় ১টি মামলা দায়ের করেছেন।
কিন্তু, চোরাকারবারীদের নিয়ন্ত্রণকারী গডফাদার আব্দুর রাজ্জাক ও হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া বরাবরের মতো রয়েগেছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
অথচ এই দুই গডফাদার সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে ইতিমধ্যে হয়ে গেছে কোটিপতি। তাদের অবৈধ অর্থের লেনদেন করা হয় বিকাশের মাধ্যমে। তবে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া সীমান্তের লাউড়গড়, চাঁনপুর ও বড়ছড়া এলাকায় একাধিক বার গণধৌলায়ের শিকার হওয়াসহ কামড়াবন্দ গ্রাম থেকে ইয়াবার চালানসহ তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছিল এলাকাবাসী। পরে তার ফাঁসির দাবীতে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে উত্তেজিত জনতা।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছে ভোক্তভোগী এলাকাবাসী। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তাহিরপুর উপজেলার সচেতন জনসাধারণ। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সাংবাদিকদের বলেন, পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩লক্ষ টাকা মূল্যের গরু ও মদ উদ্ধার করে ৩ চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত চোরাচালানের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :