তালায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এলাকার গাছিরা, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সাতক্ষীরা তালায় জনপদের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শুরু করেছেন খেজুর গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা। যাকে বলা হয় ‘গাছ তোলা’। এক সপ্তাহ পরই আবার গাছে ‘চাছ’ দিয়ে খিল ও কাঠি লাগানো হবে। খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিনটি স্তর পেরিয়ে ১৫-২০দিন পরেই রস আহরণ শুরু হয়।
সাতক্ষীরার তালা, পাকটেলঘাটা, তালা সদর সহ সব ইউনিয়নে চলছে রস আহরণের পালা। উপজেলার আগোলঝাড়া, আঠারোই,জাতপুর, বারুইহাটি,ভায়ড়া,ইসলাম কাটি, সহ বিভিন্ন গ্রামে বিশেষতঃ বিল ও রাস্তার পাশে এখন চোখে পড়ছে খেজুর ‘গাছতোলা’ ও ‘চাছা’র দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
১৭ ই নভেম্বর বুধবার উপজেলার আগোলঝাড়া, তেঁতুলিয়া, নোয়াপাড়া, কুমিরা গ্রাম ও কাঁচা সড়কের পাশে খেজুর গাছ কাটার (পরিচর্যা) এমন অসংখ্য দৃশ্য চোখে পড়ে। আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়, পাটালি পিঠা পায়েস তৈরীর উৎসব।
তালার আশেপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কী ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা চিতা পিঠা স্বাদই আলাদা। নলেন গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মিশালে আরো সু- স্বাদু লাগে।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী গুড়-পাটালির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। যশোরের বিখ্যাত থাকলেও কোন অংশে পিছিয়ে নেই সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা এখান থেকে এ গুড়-পাটালি ভারত, মালেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। খেজুর গাছ আন্যন্য গাছের মত বপন করে বা সার মাটি দিয়ে তৈরি করা লাগে না। প্রকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বীজ) থেকে চারা জন্মায়। এখন বাণিজ্যিকভাবেও রোপণ করা হচ্ছে খেজুর বীজ। সৃষ্টি হচ্ছে খেজুরের বাগান। সাধারণত বিলের মাঝের আইলের উপর, কাঁচা রাস্তার পাশে বা উন্মুক্ত জমিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। তবে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে অপব্যবহৃত হওয়ায় রস, গুড় ও পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে যাচ্ছে তালা ও আশেপাশের এলাকায়। এখন আর আগের মত মাঠ ভরা খেজুর বাগান দেখা যায় না, নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই হাতে গোনা দুই একটি। নলেন গুড়, পাটালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিস্কার বা তোলা চাচা করার জন্য খুঙ্গী , দোড়া, দা, তৈরী সহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করা সহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত। তবে গাছিরা জানান গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরীর উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশী হবে।
গাছি মোঃ নরিম আলী জানান তিনি প্রতি বছর মানুষের গাছ ভাগে ( বর্গা) করেন। সারা বছরের সংসার পরিচালনা এই একটাই উৎস এখানকার আইয়ে চলে তার সংসার। রস গুড়, পাটালী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এ বছর বিশ টির মতো গাছ তুলেছেন তিনি। গত বছরের তুলনায় এবার খেজুর গাছ নেই সব কাছ ইটের ভাটায় চলে গেছে বলে জানান এই গাছি। জীবনের এই প্রান্তিক লগ্নে এসে কি ভাবে সংসার পরিচালনা করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
তালার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোঃ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস জানান সরকারী ভাবে খেজুর গাছ সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে খুব তাড়াতাড়ি এই এলাকা থেকে খেজুরের রস গুঁড়া বিলিপ্ত হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :