আকাশের মেঘের মত উড়ছে মন, তাই গান শুনছি আর গাওয়া চেষ্টাও করছি, সাথে হাত ও দুলছে, বাবা ডেকে বলল, মামনি উনি তোমার এক ভাইয়া, তুমি ওনার সাথে কথা বলো, আমি তোমার আম্মুকে নাস্তা দিতে বলছি। আমি বললাম,আপনি কথা বলেন আমি আম্মুকে সাহায্য করছি। বাবা বললেন না, তোমার সাথে কথা বলবে, তুমি থাকো, আর কথা বলো, বলে বাবা চলে গেল। আমি আর নানা ভাই পাশাপাশি বসে কথা বলছি। আমার মনে হচ্ছে ওনাকে আগে কোথাও দেখেছি। নানা অনেক আগ্রহ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করছে। বাবা মা কেও দেখছি যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে আপ্যয়ন করার তোড়জোড় চলছে। তখন বিষয়টি কেমন খটকা লাগল, বিষয়টি কি, বাবা মা এতো আয়োজন করছে, তার মানে এখানে কিছু একটা আছে।
যাই হোক আমি মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনছি আর উত্তর দিচ্ছি,মাঝে মাঝেই আমি ও প্রশ্ন করছি। দুজনেই বেশ মজা করে কথা বলছি, নানা আমাকে বলল, তোমাকে আমি আগে দেখেছিলাম, তোমার নানা বাড়িতে, আমিও বললাম হ্যা আমিও আপনাকে আগে দেখেছিলাম, বলল কোথায়? বললাম আমার নানা বাড়িতে, বলেই অনেক হাসাহাসি হলো। কখনো আমার মাথায় হাত দিয়ে কথা বলছে, কখনো আমার হাত ধরেই কথা বলছে, ভালোই চলছে। পাশে থেকে কলি ফিসফিস করে বলছে, আমাকে জ্বালাতন করার দিন শেষ।
আমাকে বলল,আমাদের বাড়ি যাবে, বললাম হ্যা যাব, কে কে আছে আপনার বাড়িতে। বলল আমার একটা ছেলে আছে আর তার মা। আমার ছেলে টা ইঞ্জিনিয়ার,বাড়িতে মানুষ মাত্রই তিন জনা, তুমি যদি যাও তবে চার জন হবে। তখন সবাই মিলে অনেক মজা হবে। তুমি আমি অনেক অনেক গল্প করব। মাঝে মাঝে বেড়াতে যাব। এত ক্ষণে বিষয়টি পরিষ্কার হলো, বুঝতে কিছু বাকি রইলো না, কেন এতো তোড়জোড়। এরপর বাকি প্রশ্ন গুলোর উত্তর মাথা নিচু করে দিয়েছি, কারণ তখন লজ্জা লাগছিলো।
বাকি প্রশ্নের উত্তর মাথা নিচু করে দিয়েছি। সর্বশেষ যখন উনি চলে যাবে তখন আমার বাহু তে হাত রেখে বলল,আশা করি তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে। পাশে থেকে সবাই কথা শুনে হাসছে। কলি ছোট থেকেই আমার সাথেই আছে, সে এতিম, তার সব চাহিদা আমার বাবা পুরণ করে, কলি সব চেয়ে বেশি খুশি কিন্তু কেন বুঝলাম না।
ভাই,ভাবী,বাবা,মা,সহ সবাই খুব খুশি, কারণ একমাত্র ছেলে তার উপর ইঞ্জিনিয়ার, একেবারেই সোনায় সোহাগা। আমি ও খুশি,সবার খুশিতে আমার খুশি। সবাই যখন আমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে, তখন শুনতে ভালোই লাগছে। বাকি আচার অনুষ্ঠান শেষ হলো আর বিয়ের দিন ধার্য হলো।
মা বলল,জুলি তোমাকে বাবা ডাকছেন। আমি সাথে সাথেই বাবার কাছে হাজির। আমার পছন্দ আর সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেন বাবা। আমার কিছুই বলার নেই, আপনার সিদ্ধান্তই আমার জন্য মঙ্গল। তার পর বাবা মেয়ে মিলে কত কথা। আত্মীয় পরিজন সবাই এসেছে, আজ হলুদ সন্ধা, কত আলোর ঝলকানি চলছে সাথে নাচ, গান, খাওয়া দাওয়া। বার বার মনে হচ্ছিল নতুন একটা অচেনা মানুষ আর তার পরিচিত পরিবেশ গুছিয়ে চলতে পারব তো, সবার মন রক্ষা করতে পারব তো আর বাবা,মা,ভাই বোন এদের ছেড়ে কেমন করে থাকব। মাঝে মঝে কষ্ট হচ্ছে সব কিছুই ভেবে। মা আমাকে হলুদ দিয়ে কেঁদে ফেললেন,বাবার তো চোখ দুটো লাল,আমি ও কেঁদে ফেললাম। কখনও এতো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।
বাবা সাধ্য মত আয়োজন করেছিল বিয়েতে, সবাই খুবই খুশি। আমি একবুক আশা, ভালোবাসা নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চললাম। অনেক সাজসজ্য, আচার অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবাই মিলে আমাকে সুন্দর সাজানো গোছানো ফুলে ফুলে ভরা সেই রুমে বসিয়ে দিল, আমি অপেক্ষা করছি আমার প্রিয় স্বপ্ন কে বাস্তবে দেখার জন্য। সে আসল ,সবাই কে বাই বলল, আর রুমের দরজা বন্ধ করল। আমি চোখ তুলে চাইতেই দেখলাম, অস্থির আচরণ করছে, তার পাগড়ী টা ছুড়ে ফেলে দিল প্রচন্ড গতিতে, পাগড়ী টা গড়াতে গড়াতে এক পর্যায়ের শান্ত হলো কিন্তু সে অত্যন্ত বিরক্ত দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করছে শান্ত গলায় বলল, জুলি তোমাকে আমার কিছু বলার আছে, আমি পিতা মাতার একমাত্র ছেলে, কখনও তাদের কথার বাইরে যায়নি, আজ ও যেতে পারিনি, কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।
গভীর রাত রজনীগন্ধা ফুল ঝরে পড়ছে বিছানার উপর। আমি ফুলের বিছানায় নাকি কাটার উপর বুঝতে পারছি না,তবে জীবিত আছি এতটুকু নিশ্চিত করলাম। সে আবার ও বলছে, তুমি সুন্দরী, শিক্ষিত, তাই আমি চাই না তোমার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাক, তোমার জীবন গড়তে আমি সাহায্য করব, তুমি তোমার মত করে জীবন কাটাও।
আমি তোমার জীবন নষ্ট করতে চাই না, আমি প্রমিচ করছি, তোমার সব রকমের সাহায্য আমি করব। চরম সত্য এই যে, আমার জন্য অন্য কেউ অপেক্ষা করছে আর আমি তাকে কথা দিয়েছি, সারাজীবন তার হয়ে থাকব। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো। আর এই সব কিছুই জন্য আমি দুঃখিত।
কথা গুলো শোনার পর মুহূর্তের মধ্যে আমার চারিদিকে অন্ধকার দেখছি, হটাৎ যেন সব আলো গুলো নিভে গেল। আমি কোথা থেকে কোথায় এলাম আর কিবা পেলাম। সারা জীবন আমার সব সিদ্ধান্ত বাবা মা নিয়েছে, আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমি কষ্ট পেলে বাবা মা ও কষ্ট পাই, তো এই সব কিছু জানার পর তাদের অবস্থা কি হবে, আর শ্বশুর শাশুড়ি সব জেনে আমাকে কি বলবে,কালকের পর সবাই আমাকে দেখে বাজে কথা বলবে। আমি ফিরে গেলে আত্মীয় স্বজন সবার কাছে মাথা নিচু হবে বাবা মার। আমি কি করব ও আল্লাহ। আমি যার হাত ধরেছি সে আমার নয় অন্য কারো। আমার পৃথিবীর ভেঙ্গে খান খান। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বলে সবাই খুব খুশি কিন্তু সেই ছেলে আমার রক্ত মাংসের জীবন টা কে এভাবে পাথর বানিয়ে দিল,,,,,,
সমাপ্ত
আপনার মতামত লিখুন :